Ghost Stories: The Hidden Curse of the Past
অতীতের গোপন অভিশাপ:
দিনাজপুর শহর থেকে একটু দূরে, একেবারে জনবসতিহীন অঞ্চলে দাঁড়িয়ে ছিল এক পুরনো রাজবাড়ি। বাড়িটির চারপাশে বিশাল অশ্বত্থ আর বটগাছের ঘন ছায়া, যেন সূর্যের আলোও সেখানে ঢুকতে ভয় পায়। লোকমুখে শোনা যায়, এই বাড়িটি বহু বছর আগে এক ধনী জমিদারের ছিল। জমিদার ছিলেন নির্মম; তিনি প্রজাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করতেন। এক রাতে প্রজাদের অভিশাপে নাকি জমিদার ও তাঁর পরিবার রহস্যজনকভাবে মারা যান। এরপর থেকেই এই রাজবাড়ি পরিত্যক্ত পড়ে আছে।
গ্রামের মানুষ দূর থেকেও বাড়িটিকে এড়িয়ে চলে। রাত নামার পর ওখানে কারো যাওয়ার সাহস হয় না। অনেকেই দাবি করেছেন, বাড়ির ভেতর থেকে নারীর করুণ আর্তনাদ ভেসে আসে। আবার কেউ কেউ দেখেছেন জানালার ফাঁক দিয়ে জ্বলজ্বলে দুটি চোখ তাকিয়ে আছে। কিন্তু প্রমাণ করার মতো সাহস কারো হয়নি।
এই সময়ে শহর থেকে একদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী রিসার্চের উদ্দেশ্যে গ্রামে আসে। তারা ভূত-প্রেতকে তেমন বিশ্বাস করে না। দলটির নেতা রাফি বলে,
ভূত বলে কিছু নেই। সবই মানুষের মনগড়া কাহিনি। আমরা কাল রাতে রাজবাড়িতে ঢুকব।
গ্রামের লোকজন অনেক অনুরোধ করল, কিন্তু রাফি ও তার বন্ধুরা হাসতে হাসতে সেই ভয়কে উপহাস করল। অবশেষে রাতে তারা টর্চ, ক্যামেরা আর নোটবুক নিয়ে রাজবাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল।
দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা লাগল। চারদিকে ধুলো, জাল, আর ভাঙা আসবাবপত্র ছড়িয়ে আছে। তারা মজা করে ছবি তুলতে লাগল। কিন্তু হঠাৎ করেই বাড়ির ভেতরে যেন একটা অচেনা গন্ধ ভেসে এল—পচা মাংসের মতো। সবাই থমকে গেল।
মুহূর্তের মধ্যেই করিডর জুড়ে শোনা গেল কারো হাহাকার—দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ, যেন কেউ কাঁদছে। দলের সদস্যরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে গেল। রাফি বলল,
ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হয়তো বাতাসে শব্দ হচ্ছে।
কিন্তু সবার চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়। আর সেই মুহূর্তেই ভাঙা জানালার কাচে এক নারীর মুখ ভেসে উঠল। ফ্যাকাশে, রক্তাক্ত, চোখদুটি অস্বাভাবিকভাবে লাল। সবাই আতঙ্কে জমে গেল।
ধাপ – ২: রাতের অশরীরী
নারীর মুখটা মিলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো রাজবাড়ি কেঁপে উঠল। টর্চের আলো বারবার নিভে আবার জ্বলে উঠছিল। ভেতরে এক অজানা শক্তির উপস্থিতি সবাই টের পাচ্ছিল। দলের একজন মেয়ে, সুমী, হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। তার হাত ধরে টানছে অদৃশ্য কিছু। সবাই তাকে টেনে ছাড়াল, কিন্তু তার হাতে কালচে দাগ পড়ে গেল, যেন কেউ শক্ত করে চেপে ধরেছিল।
রাফি সাহস জোগাতে বলল,
আমরা যদি ভয় পাই, তাহলে গবেষণা অসম্পূর্ণ থাকবে। ক্যামেরা চালু করো।
তারা একটি ভাঙা ঘরে ঢুকল। ভেতরে বড় বড় প্রতিকৃতি ঝুলছে, যেগুলো জমিদারের পরিবারের ছবি। প্রতিটি প্রতিকৃতির চোখ যেন জীবন্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। ঘরের কোণে একটা পুরনো পিয়ানো রাখা, হঠাৎ সেটি নিজে নিজেই বাজতে শুরু করল। সুরটা এতটাই বেসুরো ও ভয়ংকর যে দলের সবাই কান চেপে ধরল।
তখন হঠাৎ করেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। ভিতরে শীতল কুয়াশা ছড়িয়ে পড়ল। পিয়ানোর সুরের সঙ্গে ভেসে আসছিল করুণ আর্তনাদ। সুমী কাঁপতে কাঁপতে বলল,
আমি... আমি স্পষ্ট দেখেছি... ওখানে দাঁড়িয়ে আছে এক নারী... সাদা শাড়ি... মুখটা রক্তে ভরা...
সবাই টর্চের আলো সেই দিকে ফেলতেই কিছু দেখা গেল না। কিন্তু গায়ে শীতল বাতাস বয়ে গেল, যেন কারো অশরীরী উপস্থিতি তাদের ঘিরে রেখেছে।
ঠিক সেই সময় রাফির ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়ল। স্ক্রিনে দেখা গেল এক বিকৃত মুখ—হাসছে, কিন্তু সেই হাসিতে ছিল শীতল আতঙ্ক। সবাই আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। রাফি জোরে বলে উঠল,
আমরা এখানে বেশিক্ষণ থাকব না। সবাই বেরিয়ে চল।
তারা দরজার দিকে দৌড়াল, কিন্তু দরজাটা আর খুলছে না। বাইরে থেকে যেন কেউ শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছে। ভেতরে ঘড়ির কাঁটা একেবারে থেমে গেছে। সময়ও যেন জমে গেছে।
ঠিক তখনই এক নারীকণ্ঠ ভেসে এল—
তোমরা কেন এসেছো? এই বাড়ি আমার...সেই কণ্ঠস্বর এতটা করুণ অথচ ভয়ংকর যে দলের সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।
ধাপ – ৩: অতীতের রহস্য
রাত বাড়তে বাড়তে মেহেদীর ভয় আরও তীব্র হচ্ছিল। ভাঙাচোরা বাড়ির অন্ধকার কোণগুলোতে যেন অদৃশ্য কেউ তাকিয়ে আছে। আচমকা বাতাসে দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল। টর্চের আলো ফেলে সে এক পুরোনো কাঠের সিন্দুক দেখতে পেল। ভেতরে ধুলো জমা কিছু হলুদচে কাগজ আর ভাঙা গয়না রাখা ছিল। কাগজগুলোর লেখা প্রায় মুছে গেলেও বোঝা গেল এগুলো বহু আগের নোটবই বা ডায়েরি।
মেহেদী এক টুকরো কাগজে লেখা পড়ল—
"আমরা এখানে এক ভয়ঙ্কর ছায়ার বন্দি। যে-ই বাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করেছে, সে আর ফিরে আসেনি…
এই লাইন পড়তেই তার শিরদাঁড়া ঠাণ্ডা হয়ে গেল। মনে হলো যেন অদৃশ্য কারও চোখ তার ওপর পড়েছে। হঠাৎ মৃদু ফিসফিসানি শোনা গেল—"তুমি চলে যেতে পারবে না…
ভয় আর কৌতূহলের দ্বন্দ্বে মেহেদী বুঝতে পারল, বাড়িটি শুধু পরিত্যক্ত নয়—এখানে লুকিয়ে আছে এমন এক রহস্য, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কেউ জানে না।
ধাপ – ৪: মুক্তি নাকি মৃত্যু
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাফি জিজ্ঞেস করল,
“আমরা কীভাবে তোমাকে মুক্তি দেব?”আত্মার কণ্ঠ ভেসে এল,
আমার দেহ এখনো এই দেয়ালের ভেতরে বন্দি। তাকে মুক্ত করো...
তারা দেয়াল খুঁড়তে শুরু করল। ইট-পাথর ভেঙে ধুলো উড়ে গেল, আর অবশেষে বেরিয়ে এল এক কঙ্কাল। গলায় অলঙ্কার ঝুলে ছিল, যেন এখনো প্রমাণ করছে সে এক রাজকন্যা ছিল। সুমীর চোখে জল চলে এলো,
এটাই জমিদারের মেয়ে...
কঙ্কাল বের হতেই চারপাশ আলোকিত হলো। বিকৃত ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে কোমল রূপ নিল। তার চোখে শান্তির ছাপ ফুটে ফুটে উঠল। সে ফিসফিস করে বলল,
ধন্যবাদ... এখন আমি মুক্তি পেলাম।
মুহূর্তেই সে মিলিয়ে গেল। ঠান্ডা কুয়াশা সরে গেল, বাতাস হালকা হলো, দরজাটিও নিজে থেকে খুলে গেল। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
কিন্তু ঠিক তখনই রাফির ক্যামেরা থেকে অদ্ভুত শব্দ এল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল সেই নারীর মুখ—এবারও সে হাসছে। ঠোঁট নড়ল, কণ্ঠস্বর শোনা গেল,
তোমরা ভেবেছো আমি শান্তি পেয়েছি? না... এ বাড়ি এখনো আমার... তোমরাই পরের শিকার।
সবাই আতঙ্কে ক্যামেরা ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। গ্রামে ফিরে এসে শপথ করল, আর কখনো রাজবাড়ির নাম নেবে না। কিন্তু সেই রাত থেকে প্রত্যেকেই অনুভব করতে লাগল—তাদের ছায়ার ভেতর যেন কেউ রয়েছে, অদৃশ্যভাবে অনুসরণ করছে।
রাজবাড়ি আজও দাঁড়িয়ে আছে। দিনের আলোয় নীরব, কিন্তু রাত নামলেই তার দেয়ালের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসে নারীর করুণ আর্তনাদ।
কারণ অশরীরীর ছায়া একবার যার সাথে লেগে যায়, সে আর কখনো মুক্তি পায় না...
এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/